Latest News

বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল


ছিটমহল একটি দেশের সীমান্তবর্তী সেই এলাকা যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশের নাগরিকদের বসবাস রয়েছেবাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছিমহলের সংখ্যা ১৬২ ছিটমহল মানে ভারতের ভেতরে বাংলাদেশের আর বাংলাদেশের ভেতের ভারতীয় ভূখণ্ডআবার এমনও আছে, বাংলাদেশের ভেতরে ভারত, তার ভেতরে আবার বাংলাদেশ যেমন কুড়িগ্রামে ভারতের ছিটমহল দাশিয়ারছড়া দাশিয়ারছড়ার ভেতরেই আছে চন্দ্রখানা নামের বাংলাদেশের একটি ছিটমহল


বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল
অখণ্ড ভারত বিভক্ত করে ভারত এবং পাকিস্তান নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লগ্নে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে রেডক্লিফের মানচিত্র বিভাজন থেকেই উদ্ভব ছিটমহলের এক দেশের ভূখণ্ডে থেকে যায় অন্য দেশের অংশএতে এক অসহনীয় মানবিক সমস্যার উদ্ভব হয় ১৬২ টি ছিটমহল আছে দুই প্রতিবেশী দেশেএর মধ্যে ভারতের ১১১টি ছিটমহল আছে বাংলাদেশেআর বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ভারতেএসব ছিটমহলে বসবাসকারী জনসংখ্যা সংখ্যা ৫১ হাজারসাম্প্রতিক (২০১১) জনগণনা অনুযায়ী ভারতের ছিটমহলে বসবাসরত লোকসংখ্যা ৩৭ হাজার এবং বাংলাদেশের ছিটমহলের লোকসংখ্যা ১৪ হাজার২৪২৬৮ একর ভূমি নিয়ে দুই দেশের ছিটমহলতার মধ্যে ভারতের ১৭ হাজার ১৫৮ একরবাংলাদেশের ছিটমহলের জমির পরিমাণ ৭ হাজার ১১০ একর
ছিটমহলের উৎস
কুচবিহার রাজ্যের কোচ রাজার জমিদারির কিছু অংশ রাজ্যের বাইরের বিভিন্ন থানা পঞ্চগড়, ডিমলা, দেবীগঞ্জ, পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, লালমনিরহাট, ফুলবাড়ী ও ভুরুঙ্গামারিতে অবস্থিত ছিলভারত ভাগের পর ওই আট থানা পূর্ব পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হয়আর কুচবিহার একীভূত হয় পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গেফলে ভারতের কিছু ভূখণ্ড আসে বাংলাদেশের কাছেআর বাংলাদেশের কিছু ভূখণ্ড যায় ভারতেএই ভূমিগুলোই হচ্ছে ছিটমহল
সীমানা নির্ধারণের সমস্যা
১৯৪৭ সালে বাংলা ও পাঞ্জাবের সীমারেখা টানার পরিকল্পনা করেন লর্ড মাউন্টবেটনতাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্রিটিশ আইনজীবী সিরিল রেডক্লিফকে প্রধান করে সে বছরই গঠন করা হয় সীমানা নির্ধারণের কমিশন১৯৪৭ সালের ৮ জুলাই লন্ডন থেকে ভারতে আসেন রেডক্লিফমাত্র ছয় সপ্তাহের মাথায় ১৩ আগস্ট তিনি সীমানা নির্ধারণের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেনএর তিন দিন পর ১৬ আগস্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয় সীমানার মানচিত্র
কোনো রকম সুবিবেচনা ছাড়াই হুট করে এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি যথাযথভাবে হয়নিঅভিযোগ রয়েছে, কমিশন সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তা আর জমিদার, নবাব, স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও চা-বাগানের মালিকেরা নিজেদের স্বার্থে দেশভাগের সীমারেখা নির্ধারণে প্রভাব ফেলেছেআর উত্তারিকার সূত্রেই উপমহাদেশের বিভক্তির পর এই সমস্যা বয়ে বেড়াচ্ছে দুই দেশ ১৯৫৮ সালের নেহেরু-নুন চক্তি অনুযায়ী বেরুবাড়ীর উত্তর দিকের অর্ধেক অংশ ভারত এবং দক্ষিণ দিকের অর্ধেক অংশ ও এর সংলগ্ন এলাকা পাবে বাংলাদেশচুক্তি অনুযায়ী বেরুবাড়ীর সীমানা নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও ভারতের অসহযোগিতায় তা মুখ থুবড়ে পড়েফলে বেরুবাড়ীর দক্ষিণ দিকের অর্ধেক অংশ ও এর ছিটমহলের সুরাহা হয়নি
এরপর সাতচল্লিশের ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির পর দুই দেশ ছিটমহলের আলাদা আলাদাভাবে তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেকিন্তু দুই পক্ষের তালিকায় দেখা দেয় গরমিলপরে ১৯৯৭ সালের ৯ এপ্রিল চূড়ান্ত হয় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ও ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল রয়েছে
এখানে বলে রাখা ভালো, ১৯৫৮ সালে সই হওয়া নেহেরু-নুন চুক্তিতে ছিটমহল বিনিময়ের উল্লেখ থাকলেও এ ব্যাপারে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সে দেশের সংবিধানের ১৪৩ ধারা সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চানতখন আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংবিধানের সংশোধনীর মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে হবেপরে ভারতের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে সংবিধান সংশোধনী আর জনগণনার অজুহাতে বিলম্বিত হয়েছে ছিটমহল বিনিময়

 

একনজরে ছিটমহল


১৯৪৭ সালে রেডক্লিফের মানচিত্র বিভাজন থেকেই উদ্ভব ছিটমহলেরএক দেশের ভূখণ্ডে থেকে যায় অন্য দেশের অংশউদ্ভব হয় এক মানবিক সমস্যার ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা সীমান্ত চিহ্নিতকরণ চুক্তিতে বলা আছে, ভূমি বিনিময়ের সময় লোকজন যেখানে থাকতে চাইবে, সেখানেই তাদের থাকতে দেওয়া হবে ১৬২ টি ছিটমহল আছে দুই প্রতিবেশী দেশেএর মধ্যে ভারতের ১১১টি ছিটমহল আছে বাংলাদেশেআর বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ভারতে ৫১০০০ জনসংখ্যা রয়েছে এসব ছিটমহলেসাম্প্রতিক জনগণনা অনুযায়ী, ভারতের ছিটমহলের লোকসংখ্যা ৩৭ হাজার বাংলাদেশের ছিটমহলের লোকসংখ্যা ১৪ হাজার ২৪২৬৮ একর ভূমি নিয়ে দুই দেশের ছিটমহলতার মধ্যে ভারতের ১৭ হাজার ১৫৮ একরবাংলাদেশের ছিটমহলের জমির পরিমাণ ৭ হাজার ১১০ একর


No comments:

Post a Comment

General Knowledge : Bangladesh Designed by Templateism.com Copyright © 2014

Theme images by Bim. Powered by Blogger.